ডেস্ক রিপোর্ট» চোখে-মুখে কেবলই হতাশা, অপ্রাপ্তি আর বিষণ্ণতার ছাপ। জেঁকে বসেছে সংসারের অজস্র চাহিদাও।
বুকের ভেতরে কষ্টের ক্ষত নিয়ে বেশ আনমনা হয়ে গেছেন শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান। বয়সও ফুরিয়ে আসছে তার। জীবন তরঙ্গে আজ ভাটা পড়েছে। কণ্ঠে আর উচ্চারিত হয় না জ্ঞানের বাণী।
সেই শিক্ষক মাহবুবুর আজ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। চোখ দুটো আর স্বপ্ন দেখায় না। কষ্টের আবরণে ঢাকা পড়া অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া নির্বাক হয়ে কেবলই রডের সঙ্গে আরেক রডের জোড় বাঁধছেন। মানুষ গড়ার এই কারিগর জীবন-জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন রডমিস্ত্রির কাজ।
বয়সের অন্তিম লগ্নে এসে শুরু করেছেন জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। নিজেকে সঁপে দিয়েছেন শ্রমিকের কাজে। মরণপণ সংগ্রাম করছেন প্রতিনিয়ত। শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তিপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভি। দেড়যুগ আগে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন ঠিকই।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা তাকে মর্যাদার পরিবর্তে দিয়েছে তিরস্কার। বেতনহীন চাকরি করছেন ১৮ বছর ধরে। এমপিওভুক্তির আশায় একে একে পার করেছেন দিন। বারবারই ভেঙেছে আশা, পেয়েছেন বঞ্চনা।
চলতি বছর নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর নতুন বার্তায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় আশাহত হয়েছেন। এখন ছেলে মেহেদী হাসানের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া, অসুস্থ মা-বাবার ওষুধ আর সংসারের খরচ জোগাতেই তিনি এভাবে রডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার কাজের সময় কথা হয় তার সঙ্গে। শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, স্ত্রী মরিয়ম বেগম, এক ছেলে, এক মেয়ে ও মা-বাবাসহ ছয় সদস্যের সংসার তার।
২০০০ সালে তিনি শিক্ষক হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় চাকরির ১৮ বছর পেরোলেও বেতন পান না। মসজিদের ইমামের দায়িত্ব নিয়ে মাসে এক হাজার আর মসজিদে গণশিক্ষায় পাঠদান করে কিছু টাকা আয় করে সংসার চালিয়েছেন। কিন্ত জীবনযুদ্ধে আর পেরে উঠছিলেন না। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজে নেমেছেন শিক্ষক মাহবুবুর। সরকারের ভৌতিক নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়েছে মাহবুবুরের মতো অসংখ্য শিক্ষকের ভাগ্য।
বাগাতিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, এ উপজেলার স্তর পরিবর্তনসহ ১৪ প্রতিষ্ঠান ননএমপিও রয়েছে। এখানে কর্মরত আছেন ২ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। জয়ন্তিপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট রবিউল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালে স্থাপিত হয়ে ৪৩ বছরেও তার মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়নি।