দৈনিক দৃষ্টান্ত রিপোর্ট : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে দ্বিতীয় দিনের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে তিনি বলেন, ‘এ মামলা ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দ্বিতীয় দিন প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বাকি বক্তব্য রাখার অনুমতি চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে ২ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করেন। বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলছে।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়া বিশেষ জজ আদালতে উপস্থিত হন। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন তিনি।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনিয়ম, দুনীর্তি ও চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল। কিন্তু তার সৌভাগ্য যে আমার মতো তার আদালতে ঘুরতে হচ্ছে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বারবার। আমার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অসত্য ও কুৎসিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এর কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং এদেশের জনগণের বর্তমান সার্বিক দুর্দশার সঙ্গে আমার এসব হেনস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলেই আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস।’
তার রাজনীতিতে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আদালতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার নিজের কোনো পৃথক আশা-আকাঙ্খা নেই। জনগণের আশা-আকাঙ্খাই আমার আশা-আকাঙ্খায় পরিণত হয়েছে। আমার জীবন পুরোপুরি জড়িয়ে গেছে এদেশের মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যয়ের সঙ্গে। তাদের সুখ-দুঃখ ও উত্থান-পতনের সঙ্গে। দেশের মানুষের জীবনের চড়াই-উৎরাই ও সমস্যা-সংকটের সঙ্গে। তাদের বিজয়, বিপর্যয় এবং সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে। দেশজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গেই একাকার হয়ে গেছে আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।’
বিএনপিপ্রধান বলেন, ‘তাই, মাননীয় আদালত, আমি যত সামান্য মানুষই হই না কেন, আমার প্রতি বর্তমান শাসক মহলের আচরণের কারণ, পটভূমি ও প্রেক্ষাপটের ব্যাপ্তি কিন্তু সামান্য নয়। দেশজাতির দুর্দশা থেকে এটিকে আলাদা করে দেখা যাবে না। কাজেই আলোচ্য মামলাটি দায়ের এবং এর সকল কার্যক্রম ও পরিণতি কেবল ফৌজদারি বিধিবিধান, আইন-কানুন ও বিচার-ব্যবস্থার মধ্যেই সীমিত নয়।’
এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মকবুল আহমেদ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চান খালেদা জিয়া। পরে জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এক লাখ টাকা মুচলেকায় তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। ভবিষ্যতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া আবারও বিদেশে যেতে চাইলে তাকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে জানান বিচারক।
এই দুই মামলার শুনানিতে গত ১২ অক্টোবর হাজির না হওয়ায় একই আদালত খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। তখন তিনি বিদেশে ছিলেন।
ওই দিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে এক ঘণ্টা বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন খালেদা জিয়া। তার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় পরবর্তী বক্তব্যের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছিল।