দৈনিক দৃষ্টান্ত রিপোর্ট : আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস, কে) সিন্হা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার নিয়ে যে বক্তব্য দিয়ে গেছেন তা আইনসঙ্গত নয়।
মন্ত্রী আজ আইন মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংএ একথা বলেন। আনিসুল হক বলেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার একই। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে এক চিঠিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আইনসঙ্গত নয়। এ বক্তব্যের জন্য আমি মনে করি প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন তাতে উনিই বিব্রত।
সুস্থতা নিয়ে প্রধান বিচারপতির যে বক্তব্যে দিয়েছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি তার বক্তব্যে হতভম্ব। তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন তিনি অসুস্থ, অথচ সাতদিন পরে বলছেন সুস্থ। আসলে যখন প্রথমে বললেন, তখনই ডাক্তারি পরীক্ষা করা দরকার ছিল, কিন্তু তা হয় নাই।”
তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তার কাজের সুবিধার্থে যেকোনো প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে পারবেন। সংবিধান এ বিষয়টিকে সমর্থন করে। তাই এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে গেছেন। রাষ্ট্রপতি তাকে ছুটি এবং তার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের প্রবিণতম বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরুপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি ৯৭ অনুচ্ছেদটি পড়ে শুনান। তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই, একটি রাজনৈতিক মহল কোনো ইস্যু না পেয়ে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো করে এটাকে ইস্যু করে বিতর্ক তৈরি অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীরণের পর প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে কাউকে অবহিত করতে হয়না। যেহেতু তার অনুপস্থিতিতে একটা শূন্যতা সুষ্টি হয় সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। সংবিধান অনযায়ি রাষ্ট্রপতি কর্মে প্রবিণতমকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনে দায়িত্ব দেন। প্রধান বিচারপতির প্রদত্ত চিঠির প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রলায় রাষ্ট্রপতির নির্দেশ ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশ যেতে জিও লাগে। সেটা সরকারের পক্ষ থেকে করে দেয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির অসুস্থতাজনিত কারণে এবং দীর্ঘ দায়িত্ব পালনে মানসিক অবসাদ দূরীকরণে ছুটিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি বরাবর যে চিঠি দিয়েছেন এবং এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্ট যে সব ফরোয়ার্ডিং দিয়েছে সেসব চিঠি গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে দেয়া লিখিত চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে উল্লেখ করায় আমরা হতভম্ব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির চিঠি বা বিবৃতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমি দেখেছি। চিঠি বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সুপ্রিমকোর্টের ব্যাপার। এতে সরকারের কোন কিছু করার নেই। আমি মনে করি, বাস্তবতার কারণে সুপ্রিমকোর্ট এধরনের বিবৃতি দিতে পারে। এটা প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাষ্টিস অনুযায়ী তারা পারেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিমকোর্টের বিবৃতিতে দেখেছি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগের বিষয়ে সুরাহা না হলে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তার সঙ্গে চেয়ারে বসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সুপ্রিমকোর্ট প্রধান বিচারপতি বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে সে বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আইনমন্ত্রী বলেন, যেসব অভিযোগ প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে, সেসব অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। এতে একটা পক্ষা নেয়া হবে। এসব নিয়ে ইনভেস্টেগেশন হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিচারপতি সিন্হা এখনো বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির আসনটি একটা প্রতিষ্ঠান। তাকে (প্রধান বিচারপতি) কোন ব্যাপারে অভিযুক্ত করতে হলে তাড়াহুড়ো করে কিছু করা যাবে না। বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়া যথাযত ভাবে অনুসরণ করেই তা করতে হবে। প্রধান বিচারপতি একজন প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ। তার বিরুদ্ধে তাড়াহুড়া ও খামখেয়ালি করে কোনো কিছু করা সমীচীন হবে না বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি বিষয়ে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তার অধিকাংশই দুনীর্তির অভিযোগ। এ অভিযোগ তদন্তে ও অনুসন্ধানে দেশে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন, কে এটার অনুসন্ধান করবে।
আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের কাছে প্রধান বিচারপতি বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অভিযোগের বিষয় দেয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির একট অন্তর্নিতিত (ইনহারেন্ট) ক্ষমতা আছে সে অনুযায়ি এটা তিনি করেছেন। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এসব অভিযোগ বিষয়ে কথা বলা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে বিতর্ক আছে। এ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বিষয়ে রিভিউ করব। ব্রিফিং-এ আইনমন্ত্রী বিভিন্ন গনমাধ্যমে টকশোতে তাকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা ও বক্তবেরও জবাব দেন।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর জারি করা আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ‘আইন ও বিচার বিভাগের গত ০২ অক্টোবরের আদেশে প্রধান বিচারপতির অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে অর্থাৎ ০৩ অক্টোবর থেকে ০১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বর্ধিত ছুটিকালীন বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর-২০১৭ ইং পর্যন্ত অথবা পূনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন’।
ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস, কে) সিনহা ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে নিজেকে সুস্থ দাবি করে একটি লিখিত বিবৃতি দেন। এ বিবৃতিকে বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে আজ প্রেস ব্রিফিং করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সব প্রশ্নের জবাব দেন।