৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ডিভাইস ব্যবহারের ইঙ্গিত সচিবের

ডেস্ক রিপোর্ট:: পাবলিক পরীক্ষায় এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো এবং বিতরণ করাও হবে না। তা হলে ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ কারণে একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরি করতে সবাই একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেন।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রশ্ন ফাঁসের কারণ এবং এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন।

সোহরাব হোসেন বলেন, আগামী বছর থেকে কোনো প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কি-না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। হয়তো কোনো ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষার হলে পৌঁছানো ব্যবস্থা করা হবে। আমি যেটা মনে করি প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে এ পদ্ধতিতে কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়।

সচিব বলেন, আমরা আজ বসেছি সবচেয়ে হাইয়েস্ট লেভেলে। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে চলমান পরীক্ষার যে কয়টি বাকি আছে এবং যেগুলো শেষ হয়েছে সেই পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাকি পরিক্ষাগুলো ভালোভাবে শেষ করা এবং বাকি পরীক্ষাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসঙ্গে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন কী পদ্ধতি ইমপ্লিমেন্ট করা যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে। যাতে আগামী পরীক্ষাগুলো অন্তত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়। যেহেতু আগামী এইচএসসি পরীক্ষার মাত্র দেড় মাস বাকি, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা আগাম প্রস্তুতিস্বরূপ কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি তা নিয়ে সভায় কথা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামীতে যেসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেখানে কোনো কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারী মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না। করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কোনো ব্যক্তির মোবাইলে পাওয়া গেলে তাকে আইসিটি আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা- এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

‘আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করা, এজন্য যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের (সাংবাদিক) ও অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চাই। কারণ এ পরীক্ষায় যারা অংশ নিচ্ছে তারাই আগামীতে এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। তারা যেন আদর্শবান হিসেবে গড়ে ওঠে, এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার।’

আগামী পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতির কী ধরনের পরিবর্তন আনা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, যে পরিবর্তন আনা হবে তবে তা আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বাস্তবায়ন করা হবে। ওই পরীক্ষার জন্য একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরি করা হবে। এটা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। সুতরাং আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার আগে এটা করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, দেখুন এখন পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে। ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা বলেছি এ পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয় সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের আসতে হবে। এ বিষয়ে আমি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারবো না।

‘পাবলিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সভায় কার্যপত্রে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা সম্ভব সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে।’

যেসব বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তা বাতিল করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, এটা নিয়ে একটি কমিটি করা করছে। তারা যেভাবে সুপারিশ দেবেন সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা করতে আমরা প্রস্তুত। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

বৈঠকে ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনে আমাদের জনবল বাড়িয়ে দায়ীদের তথ্য উদ্ধার করা হবে এবং শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপত্বিতে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, আইসিটি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দফতর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।