দৈনিক দৃষ্টান্ত রিপোর্ট : ফেনী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফেনিউরিউজমের চতুর্থ ট্যুর রবিবার ঘুরে আসল সোনাগাজীর দর্শনীয় স্থানসমূহ। ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের ৭০ জন শিক্ষার্থী জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধোদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য সোনাগাজী ট্যুর আয়োজন করা হয়।
ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে রবিবার সকালে শিক্ষার্থীদের ফেনীউরিজম সোনাগাজী ট্যুরের উদ্বোধন করেন ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কুল প্রদীপ চাকমা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকে এম এনামুল করিম, ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিসিঞ্জার চাকমা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের জেলা রিপোর্টার দিলদার হোসেন স্বপন, চ্যানেল আই’র প্রতিনিধি রবিউল হক রবি, ডিবিসির আবু তাহের, ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান প্রমুখ।
উদ্বোধনের পরপরই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার নের্তৃত্বে ফেনিউরিজম টিম সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের জহির রায়হান শহীদুল্লাহ কায়সারের বাড়ি মজুপুর গ্রামে।
সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মিনহাজুর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজাম উদ্দিন ও নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন।
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সাহিত্যকর্ম ‘হাজার বছর ধরে’ বা ‘সংশপ্তক’ এর চরিত্রগুলো এই গ্রাম থেকেই নেয়া। এখনো বুড়ো মকবুল বা মন্তু বা হুরমতি এর বাড়ি রয়েছে সেখানে। মূলত এ সকল বাস্তব চরিত্র অবলম্বনেই এই দুই মনীষী সাহিত্য রচনা করেন। বিষয়গুলোকে এভাবেই বর্ণনা করে শোনান ভোরবাজার এডভোকেট বেলায়েত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: একরামুল হক কিশোর।
সেখান থেকে টিম ফেনিউরিজম উপস্থিত হয় ঐতিহ্যবাহী আমিরাবাদ বিসি লাহা স্কুল এন্ড কলেজ।
সেই কলেজের বর্ণাঢ্য ইতিহাস বর্ণনা করেন কলেজের প্রধান শিক্ষক লুৎফা খানম।
সেখান থেকে টিম ফেনিউরিজম রওয়ানা হয় সোনাগাজীর ঐতিহ্যবাহী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প মুহুরী বাঁধে। সেখানে প্রকল্পটির ইতিহাস ও গুরুত্ব শিক্ষার্থীদের বর্ণনা করে শোনান পানি উন্নয়ন সেকশন অফিসার নুরুল আফসার।
এখান থেকে শিক্ষার্থীরা ভ্রমণ করেন সোনাগাজীর বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী।
এরপর টিম ফেনিউরিজমের গন্তব্য ছিল চরদরবেশ ইউনিয়নে ড. সেলিম আল দ্বীনের বাড়ি সেনেরখিলে। সেলিম আল দ্বীনের বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেলিম আল দ্বীনের জীবনী ও তার নাটকের প্রভাব বর্ণনা করেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক রাফিউস সানি রূপম। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী সার্কেল এএসপি জুনায়েত কাউসার, চর দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টো ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম।
সেখান থেকে টিম ফেনিউরিজম আসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরে আসা স্থানসমূহের উপর ৭০ জন শিক্ষার্থী একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযাগিতার বিজয়ী দশজন প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করেন জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়।
পুরো সময়জুড়ে ফেনিউরিজম টিমের সাথে উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো: মিনহাজুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজাম উদ্দিন আহম্মদ।
এছাড়াও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া, চ্যানেল আই’র প্রতিনিধি রবিউল হক রবি, ডিবিসির আবু তাহের, ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুর রহমান জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত এই ট্যুরের সাথে ছিলেন।
ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধোদের ইতিহাস এবং জেলার অনাবিল সৌন্দর্য্যকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসনের একটি অভিনব উদ্যোগ হলো ফেনীউরিজম। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক দিনের একটি আকর্ষনীয় ট্যুর আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালের মার্চ মাস উদ্বোধন করা হয়। তারপর ৩ বার ফেনীউরিজম দল ফুলগাজী, পরশুরাম ও সোনাগাজী গিয়ে দেশ সম্পর্কে জেনেছে ও শিখেছে। ফেনিউরিজম মূলত অভ্যন্তরীণ পর্যটনে জেলা প্রশাসন, ফেনীর একটি অনন্য উদ্ভাবনী উদ্যোগ। তরুণ প্রজন্মকে নিজ মাটি ও মানুষকে চেনানোর পাশাপাশি ফেনীর অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীর জেলার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান সরাসরি ঘুরে দেখার ও সে স্থানগুলো সম্মন্ধে জানার সুযোগ পায়। তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধোদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য তারা সোনাগাজী ভ্রমনে যায়। এতে তারা আনন্দিত।
ফেনী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা বলেন, শিক্ষার্থীরা সোনাগাজীর নবাবপুরের বুদ্ধিজীবি জহির রায়হানের বাড়ী, মুহুরী সেচ প্রকল্প ও নাট্যকার ড. সেলিম আলদীনের বাড়ী গিয়ে ইতিহাস সম্পর্কে জানবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাটি ও মানুষ সম্মন্ধে জানার ভিত শক্ত হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত একটি তরুণ প্রজন্ম পাব। ফেনিউরিজমের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পর্যটনের সাথে সাথে নিজ জেলা ও মাটিকে শেখা। নিজ জেলা নিয়ে গর্বিত এক প্রজন্ম গড়ে উঠবে। প্রতি মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি করে দল যাবে।