ডেস্ক রিপোর্ট» নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের ‘দরগাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ মাঠ দখল করে রাখা হয়েছে রাস্তার নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে। ধুলাবালি আর কালো ধোঁয়া এবং বিটুমিনের তীব্রগন্ধে ক্লাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। কালো ধোঁয়ায় এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) অধীনে বান্দায়খাড়া বাজার থেকে উপজেলার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫০ মিটার রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ টাকা। কাজটি পেয়েছেন ‘ইথেন এন্টারপ্রাইজ’ নওগাঁর ঠিকাদার ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। তবে সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন আত্রাই উপজেলার ঠিকাদার খলিলুর রহমান নবাব।
রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ শুরুর ১৫ দিন আগ থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণ সামগ্রী বালু, পাথরের কুচি, বিটুমিনের ড্রাম রাখা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ ও পুরনো জুতা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ের সামনে দক্ষিণ পাশের জানালা-দরজা বন্ধ করে পাঠদান করতে হচ্ছে। সামনে মাঠে বালু, পাথরের কুচি, বিটুমিনের ড্রাম ও পাথর-বালু মিশ্রণের জন্য প্লান্ট মেশিন বসানো হয়েছে। বিকট শব্দে সেটি চলছে। কাঠ ও পুরনো জুতার তলা জ্বালিয়ে বিটুমিন গলানো হচ্ছে। তীব্র কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি আর কালো ধোঁয়া এবং বিটুমিনের তীব্রগন্ধে ক্লাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। গত পাঁচদিন ধরে চলা এ কর্মযজ্ঞে প্রথমে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ বাধা দিয়েছিলেন। পরে ‘রহস্যজনক’ কারণে তার বাধা আর টেকেনি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবিদা সুলতানা বলেন, আমি একজন ক্যান্সারের রোগী। আগুনের প্রচন্ড তাপ, কালো ধোঁয়া ও তীব্র গন্ধ এবং মেশিনের শব্দে স্কুলে থাকাই কষ্টকর। পাঠদানেও মনোযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমি অসুস্থ বোধ করছি। কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, শব্দ আর ধুলাবালির ধোঁয়ায় স্কুলে থাকাই কষ্টকর।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, প্রথমে মালামাল রাখতে নিষেধ করেছিলাম। তবে তাদের একটু সুবিধার জন্য অনুমতি সাপেক্ষে গত আট দিনে থেকে রাস্তার কাজের জন্য ঠিকাদার মালামাল রেখেছেন। এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, স্কুল মাঠে মালামাল রাখতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও মালামাল রেখে কাজ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের জানালা-দরজা বন্ধ করে পাঠদান করতে হচ্ছে। তারপর তীব্র গন্ধ ও শব্দে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের তো আরও সমস্যা।
এ বিষয়ে সাব ঠিকাদার খলিলুর রহমান নবাব বলেন, কোনো জায়গা না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গত পাঁচদিন থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে রাস্তার কাজের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। সমস্যা একটু হতেই পারে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আত্রাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোখসানা আনিছা একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুজ্জেহা বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে মালামাল রেখে কাজ করা ঠিক না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।