এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) :: যৌন হয়রানির অভিযোগ নিস্পত্তি না হতেই প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বা এক কলেজছাত্রীর। হতভাগ্য কলেজছাত্রীর নাম কামরুন্নাহার ইতি (১৯)। সে ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের আবদুল কদ্দুসের কন্যা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী কামরুন্নাহারের সাথে মধুপুর উপজেলার ভট্রবাড়ি গ্রামের জলিল মিয়ার সাথে গত মে মাসে বিয়ে হয়।
নিহত কামরুন্নাহারের চাচা আবদুল হামিদ ভূটু অভিযোগ করেন, বিয়ের পর হতেই জলিলের পরিবার বিভিন্ন অজুহাতে যৌতুক আদায় করে। নতুন করে শুরু হয় যৌন হয়রানি।
কামরুন্নাহারের মা আসমা বেগম অভিযোগ করেন, জামাতা জলিল ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর কামরুন্নাহার শ^শুরবাড়ি থেকে কলেজে ক্লাস করতো। বাড়িতে একা পেয়ে কলেজ পড়ুয়া দেবর জুয়েল প্রায়ই তাকে যৌন হয়রানি করতো।
এ নিয়ে একাধিকবার পারিবারিক পর্যায়ে সালিশ হয়েছে। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে সাত্বনা দিয়ে কামরুন্নাহারকে ধৈর্য্য ধরতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে সময় আর আসেনি। অকাল মৃত্যু দিয়েই সে সান্তনার দায় পরিশোধ করলো কামরুনন্নাহার ইতি।
বৃহস্পতিবার দেবরের কান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে নিহত কামরুন্নাহার স্বামী জলিলের সাথে ঢাকায় থাকার জন্য ফোনে চাপাচাপি শুরু করেন। এমতাবস্থায় শুক্রবার ঢাকায় যাবার জন্য কামরুন্নাহার বিনিময় পরিবহনের টিকেট ক্রয় করেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সে মাতা আসমা বেগমকে পরদিন ঢাকায় যাবার কথা জানান। কিন্তু এর দুঘন্টা পর কামরুন্নাহরের শ্বাশুড়ি মোবাইলে আসমা বেগমকে জানান, তার মেয়ে গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রাত বারোটায় কামরুন্নাহারের বাবামা ও আত্মীয়স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন কামরুন্নাহারের লাশ জাম গাছের নিচে মাটিতে ওড়না দিয়ে ঢেকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। গলায় ফাঁসের কোন দাগ নেই। তবে গলায় কালচে একটি সরু দাগ রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধস্তাধস্তি ও কামড়ের চিহ্ন রয়েছে।
স্বামীর বাড়ি লোকজন দাবি করেন কামরুন্নাহার আত্মহত্যা করেছেন। মধুপুর থানা পুলিশ শুক্রবার দুপুরে লাশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল ময়না তদন্তে পাঠান। পরে শুক্রবার গভীর রাতে কামরুন্নাহারকে তার বাবার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ দিকে কামরুন্নাহারের অকাল প্রয়াণে সহপাঠিদের মধ্যে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।
গোপালপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আকন্দ জানান, কামরুন্নাহার মেধাবী ছাত্রী ছিল। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে তার অর্নাস ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর কথা। কলেজ থেকে গত বৃহস্পতিবার সে এডমিট কার্ড তুলে নিয়ে যায়। এমন একটি হাস্যোজ¦ল মেয়ে কখনো আত্মহত্যা করতে পারেনা।
কামরুন্নাহরের ভাই হায়দার আলী অভিযোগ করেন, তার বোনের গায়ে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট দাগ ছিলে। তারা এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
মধুপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মূল তদন্ত শুরু হবে। দোষী কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।