ডেস্ক রিপোর্ট>>স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের ঘোষণাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে বেলজিয়ামের একটি আদালত। আদালত রায়ে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। হিজাবের ওপর কর্তৃপক্ষের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে দেশটির ম্যাশেমকেলেন অঞ্চলের একটি স্কুলে ১১ জন অভিভাবক আদালতের শরণাপন্ন হন।
আদালত বলেছে, তারা মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় চুক্তির আলোকে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করছে। তাই সব ইউরোপীয় দেশেরই তার নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া উচিত। আদালতের এই রায় অনুযায়ী ওই ছাত্রীরা আগামী ৩০ দিন পর থেকে নিজ পছন্দ মতো হিজাব পরতে পারবে।
বেলজিয়ামের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংগঠন বেলজিয়াম দিয়ানেত ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার কসকুন বেয়াজগুল বলেছেন, তার সংগঠন এই মামলায় ছাত্রীদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, এই দেশের এ ধরনের মামলার জন্য এই রায়টি উদাহরণ হয়ে থাকবে। ২০১৫ সালে বেলজিয়ামে ফ্লেমিশ কমিউনিটি এডুকেশ স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের টিভিতে প্রথম হিজাব পরা সাংবাদিক
হলিউড রিপোর্টার ডট কম
অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো পূর্ণকালীন রিপোর্টার হিসেবে একজন হিজাব পরিহিত নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা নারীটির নাম তাহেরা রহমান।
ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কোনো টেলিভিশন স্টেশনে তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিজাব পরে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি সংবাদ পাঠও করছেন নিয়মিত। ৯ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়-আইওয়া সীমান্তবর্তী এলাকা কুয়াড সিটিজে স্থানীয় টিভি স্টেশন ‘লোকাল ফোর নিউজ’-এ হিজাব পরিহিত অবস্থায় সংবাদ পাঠ করেন তাহেরা।
‘লোকাল ফোর নিউজ’ চ্যানেলটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসের আঞ্চলিক শাখা। ইলিনয় ও আইওয়া দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি শহরকে একসঙ্গে কুয়াড সিটিজ বলা হয়।
ওই অঞ্চলে সম্প্রচার হয় ‘লোকাল ফোর নিউজ।’ ওই টিভি স্টেশনে গত দুই বছর ধরে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছিলেন তাহেরা। তবে সব সময়ই তার স্বপ্ন ছিল টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট তুলে ধরার। কিন্তু মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর অঘোষিত নীতি হলো- হিজাব পরা কাউকে পর্দায় হাজির না করার। মেধাবী তাহেরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন। আগে কাজ করেছেন সিবিএসের শিকাগো অফিসে। সহকর্মী ও সিনিয়রেরা সব সময় তাকে বলে এসেছেন, পর্দার সামনে আসতে হলে তাকে হিজাব খুলতে হবে! তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য তাহেরা জানান, ‘শিকাগোর একাধিক টিভি স্টেশনে তিনি চেষ্টা করেছেন রিপোর্টার বা সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার।
কিন্তু সবাই তাকে হিজাবের কথা বলে না করে দিয়েছে। আর টিভিতে কখনো আমার মতো দেখতে কাউকে দেখিনি। তাই একপর্যায়ে মনে হয়েছিল আমি আসলে এই সুযোগ পাব না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’ এরপরই তাহেরা যোগ দেন লোকাল ফোর নিউজে। শেষ পর্যন্ত কাজে মুগ্ধ হয়ে কর্তৃপ তাকে টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ দেয় ৯ ফেব্রুয়ারি। সুযোগ পেয়ে তাহেরা খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমি কর্তৃপরে উদারতায় খুশি। আশা করি, আমি আমার কর্মদতায় এগিয়ে যাব।’
শুক্রবার ‘লোকাল ফোর নিউজ’ জানায়, তাহেরা হলেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো হিজাবি মুসলিম নারী যিনি অন-এয়ার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করবেন। মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি তাহেরার বাবা-মা। প্রথম টিভি পর্দায় সংবাদ পাঠের দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাহেরার অফিসে এসে হাজির হয়েছিলেন তারা।
অনুষ্ঠান দেখতে বসে কান্না থামাতে পারেননি মা। তাহেরার মা দারদুনেহ রহমান জানান, ‘তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আর মা হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত। ‘টেলিভিশনের পর্দায় মেয়েকে হিজাব মাথায় দেখে উচ্ছ্বসিত তাহেরার বাবা-মা। আর তাহেরাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে খুশি রিচা টেইলর।
উল্লেখ্য, আমেরিকার পিউ রিচার্স সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী সে দেশের ৬৮ শতাংশ মুসলিম পুরুষ এবং ৮৩ শতাংশ মুসলিম নারী বৈষম্যের স্বীকার। অন্য দিকে মার্কিন সংস্থা রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশটির স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের হার মাত্র ২২ শতাংশ।