২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


দেশে নতুন আতঙ্ক ব্লু হোয়েল গেম *দেশে এ পর্যন্ত ৬১ জনের প্রাণ গেছে, ভারতে এই সংখ্যা ১৩০ *‘এই গেমে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না’

 

দৈনিক দৃষ্টান্ত ডেস্ক : এবার বাংলাদেশে নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক মরণঘাতি গেমস ‘ব্লু হোয়েল’। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ১৩০। এর মধ্যে পশ্চিবঙ্গেই মারা গেছে অন্তত ২০ জন। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর এই গেমের বলি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। গত দু’মাস ধরে ভারতজুড়ে চলছে ব্লু হোয়েল আতঙ্ক। ৫০ ধাপের এই খেলায় শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়৷ বরং বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷ আর গেমে প্রবেশ করে তারা বিবেকহীন হয়ে পড়ে। ৩১ ধাপে গিয়ে তাকে নিজের ওপর আঘাতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটা মাদকাসক্তের চেয়ে ভয়ঙ্কর। ভয়ঙ্কর এই গেমের সফটওয়্যার লিঙ্ক ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ব্লু হোয়েল গেমের শিকার হয়েছে রাজধানী ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের এক কিশোরী। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয় তার পড়ার কক্ষ থেকে।

কিশোরীর নাম অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। ছিল তুখোড় মেধাবী। স্কুলের ফার্স্ট গার্ল হিসেবেই পরিচিত ছিল সে। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় ছিল প্রথম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। তার বয়স ছিল মাত্র তেরো। পড়ছিল অষ্টম শ্রেণিতে। হলিক্রস স্কুলে ভর্তির পর থেকে বদলে যেতে থাকে সে। পড়াশোনার জন্য সে ব্যবহার শুরু করে ইন্টারনেট। কয়েক বছর আগে থেকেই এনড্রয়েড মোবাইল ফোনও ব্যবহার শুরু করে স্বর্ণা। ফেসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার চলছিল। এরমধ্যে সবার অজান্তে সে ঢুকে পড়ে ইন্টারনেটের এক নিষিদ্ধ গেমসে। নিহত কিশোরীর পিতার সন্দেহ, তার আদরের মেয়ে ঢুকে পড়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক ডেথ গেমস ব্লু হোয়েলে। বুধবার দিবাগত শেষ রাতে সে নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরদিন বৃহস্পতিবার ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় নিউ মার্কেট থানাধীন সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসা ৫বি ফ্ল্যাট থেকে। ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকূটও উদ্ধার করা হয়। তা এখন পুলিশের হাতে। তাতে বড় করে লেখা, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়।’ লেখা শেষে গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্ন আঁকা।

মনোবিজ্ঞানিদের তথ্য মতে উক্ত ছাত্রীসহ অনন্ত  অন্তত ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ১৩০ বলে জানা গেছে। নিজ দেশ রাশিয়াতে এর শিকার হয়ে ১৮১ জন আত্মঘাতী হয়েছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। বাংলাদেশের আইনে যদি এই অপরাধের জন্য উদ্ভাবকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ থাকে আমি মামলা করব। এই গেমে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। তাই আমি অনুরোধ কেউ যেন কৌতূহলের বশেও এই গেমসে না ঢুকে।

ব্লু হোয়েল’র ৫০তম চ্যালেঞ্জ অর্থাত্ সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা
বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার পথ দেখাচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’। এটি সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন কিংবা নিছক গেম নয়। এটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক একটি ডিপওয়ে গেম। যেসব কম বয়সী ছেলে-মেয়ে হতাশায় ভোগে তারাই সাধারণত আসক্ত হয়ে পড়ে এ গেমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো ক্লান্তি বা বিষন্নতা দূর করার গেম নয়। আত্মহত্যার প্রবেশ পথ মাত্র। ভারতে ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয়ে আত্মঘাতী কয়েক তরুণের সুইসাইডাল নোটে লেখা হয়েছে, ‘ব্লু হোয়েলে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না’। জানা গেছে, এই গেমে ৫০টি ধাপ রয়েছে। প্রথম দিকে একই গেমের কিছু সহজ কাজ থাকে। এক বা একাধিক কিউরেটর দ্বারা চালিত হয় এই গেম। কিউরেটরদের নির্দেশেই গেমের এক একটি নিয়ম মেনে চলতে থাকে অংশ গ্রহণকারীরা। নিয়ম অনুযায়ী একবার এই গেম খেললে বেরুনো যায় না। কেউ বেরুতে চাইলেও তাদের চাপে রাখতে পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয় বলে আলোচনা আছে। এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁঁকা, সারা গায়ে আঁঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনো ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি। চ্যালেঞ্জ নেয়ার পর এসব ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁঁকতে হয়।

একবার এই গেম খেললে কিউরেটরের সব নির্দেশই মানা বাধ্যতামূলক। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। এই চ্যালেঞ্জ নিলে গেমের সমাপ্তি।

২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ঐ মরণ খেলা৷ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে৷ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে৷ যেন আত্মহত্যার জন্যই৷ সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমি৷ রাশিয়ার এক মনোবিজ্ঞানি এই খেলার আবিস্কারক। ইদানীং ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একাধিক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এর৷ হু হু করে বাড়ছে আত্মহননের ঘটনা৷ সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) একটি বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’৷ ভারতে গত দু’মাস ধরে ব্লু হোয়েল নিয়ে চলছে শোরগোল। স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ব্লু হোয়েল লিংক সরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সরকার। পাশাপাশি এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সাধারণভাবে গোপন গ্রুপের মধ্যে অপারেট করা হয় এ গেম। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো জনপ্রিয় স্যোশাল ফ্লাট ফরমকে কাজে লাগায় এডমিনরা। ২০১৬ সালে রাশিয়ায় ব্লু হোয়েল গেমের কিউরেটর সন্দেহে ফিলিপ বুদেকিন নামের ২২ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেরায় ফিলিপ স্বীকার করে, এই চ্যালেঞ্জের যারা শিকার তারা এই সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমি সমাজ সংস্কারকের কাজ করছি। অনলাইনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফিলিপ বুদেকিন নামে রাশিয়ার এক তরুণ এই গেমের সফটওয়্যার তৈরি করেন। তিনি মনোবিজ্ঞানের ছাত্র। এরই মধ্যে ওই যুবককে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে ডয়েচে ভেলের খবরে বলা হয়েছে।

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা৷ তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি৷ একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়৷ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে৷ এই খেলায় প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন, এমনটা নয়৷ মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়েছেন অনেকে৷ গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলি৷ এই টাস্কগুলিতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে৷ এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই ডিলিট করা সম্ভব নয়৷ শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে৷

ব্লু হোয়েলে আসক্তদের চিহ্নিত করা যাবে যেভাবে
যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদেরকে সব সময় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অনেকটা অস্বাভাবিক আচারণ করে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় স্যোশাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনো আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা। এদিকে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেন ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে বেশি সময় দিচ্ছে, অনেক অভিভাবকের সেদিকে তাকানোর সময় নেই৷ ফলে বিপদ তাঁদের নজর এড়িয়ে ঘরে ঢুকছে৷ বাবা-মায়েদের তাঁদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দেওয়াই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান৷ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগও তাদের ফেসবুক পেজে ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, অনলাইনে ব্লু হোয়েল গেম খেলা বা এই গেমের লিঙ্ক দেওয়া-নেওয়া বা সে চেষ্টা দন্ডনীয়। যারা এগুলোর যে কোনো একটি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাইবার পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানি অধ্যাপক ডা. মুহিত কামাল ইত্তেফাককে জানান, অনেক কিশোর-শিশোরী এখন এই গেমে আসক্ত হচ্ছে। গেমটি তাদের এক পর্যায়ে বিবেকহীন করে ফেলে। তখনই আস্তে আস্তে তাদের আত্মহনের পথে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বলে আত্মহত্যা না করলে তাদের বাবা-মা’কে মেরে ফেলা হবে। মুহিত কামাল তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জিত তরুণ সমাজকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি মরণঘাতির এই লিঙ্কটি বাংলাদেশে যাতে অকার্যকর থাকে সেব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘ব্লু হোয়েল গেম’ একটা ক্রাইম। এটি অপরাধের নতুন ডাইমেনশন। এটি বন্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেন, এটা ইন্টারনেটে একটা অভিশাপ।  টেকনোলজি নতুন কোনো আবিষ্কার যখন আসে সেটা একদিকে যেমন মানব সমাজের জন্য কল্যাণের বার্তা বয়ে আনে অন্যদিকে তা দ্বারা অকল্যাণ হয়। ব্লু হোয়েল তার একটি ফল। এর হাত থেকে শিশু কিশোরদের রক্ষার  উপায় হিসেবে তিনি, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণকারীদের নজরদারি বাড়ানো, এসব গেমের উত্স বন্ধ করা এবং অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার কথা বলেন।
ব্লু হোয়েল বিষয়ে ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মিজ খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, যারা মানসিক ভাবে সুস্থ্য নয় তারা তরুণদের কাছে এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চার ছুড়ে দেয়। আর তরুণরা এই গেমের একটা স্টেপ পার করাকে অর্জন হিসেবে নেয়। জুয়া খেলায় যেমন আসক্তি কাজ করে এই গেমগুলোতেও ঠিক তেমনি হয় বলে আমার মনে হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি এই গেম অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড/ইনস্টল করতে না পারা এবং সাইবার নিরাপত্তাকারীদের ব্লু হোয়েল একদম নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দেন।