২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


প্রধান শিক্ষকের টেবিলে পা তুলে বসলেন স্কুলের জমিদাতা!

মো. ইউনুস মোল্লার পরিচয় তিনি আমেরিকা প্রবাসী বিত্তশালী। বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী। উপজেলার ৪৭ নম্বর মধ্য শিয়ালকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা। সেই অধিকারে তিনি স্কুলে ঢুকলেন, বসলেন প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে। বসেই ক্ষ্যান্ত দিলেন না, দুই পা তুলে দিলেন টেবিলের উপর। তারপর শুরু হলো খবরদারি, অশালীন আচরণ।
এ ঘটনা গত বৃহস্পতিবারের (৫ সেপ্টেম্বর)। দেশে এসে কয়েকদিন ধরে স্কুলের শিক্ষকদের উপর নানান অযাচিত হস্তক্ষেপ করে আসছিলেন তিনি। এ নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভের।
শিক্ষকদের অভিযোগ, মো. ইউনুস মোল্লা গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের শিক্ষকদের উপর অযথাচিতভাবে খবরদারি করে আসছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা তুলে শিক্ষকদের নানারকম নির্দেশ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনকে জুতা নিয়ে মারতে উদ্যত হন।
পরে ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জমিদাতা ইউনুস মোল্লা বিদ্যালয়ে এসে তার কাছে স্কুলের স্টিলের আলমিরার চাবি চান। তিনি চাবি দিতে অস্বীকার করায় তার উপর রেগে গিয়ে নানা রকম অশ্লীল মন্তব্য করেন। এক পর্যায়ে ইউনুস মোল্লা তার পায়ের জুতা খুলে অন্য শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সামনেই মারতে উদ্যত হন। ইউনুস মোল্লার চিৎকারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের এ অপমানের বিচার চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা আক্তার এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনার বিচারের দাবি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করবেন।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. ইউনুস মোল্লা আমেরিকা প্রবাসী। তিনি গত কয়েকদিন আগে এলাকায় আসেন। গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষক হাজিরা খাতা নিয়ে ওই খাতায় উল্টাপাল্টা মন্তব্য লেখেন। এরপর শিক্ষকদের নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।
তিনি আরও জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বরও তিনি স্কুলে এসে একইভাবে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে জুতাসহ দুই পা টেবিলের উপর তুলে বসেছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া শিক্ষক হাজিরা খাতায় অন্য কেউ মন্তব্য লেখার অধিকার রাখেন না। এ বিষয়ে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।