২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে ১০০ কারিগরি স্কুলে

ক্যাম্পাস ডেস্ক» সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল (টিএস) নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব স্কুলে ‘নিড বেসিস’ নতুন কিছু বিষয় চালু করা হবে। প্রতিটি স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ে ৭৫ জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। রাজস্ব খাতভুক্ত সারাদেশে মোট সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পাবেন এসব স্কুলে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোতে পদসৃজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব পদে নিয়োগ দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে।

জানা গেছে, প্রথমবারের মতো সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় টিএস বা ভোকেশনাল স্কুল নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৪ কোটি টাকা যা সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে একশ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রতিটি স্কুলে ৮৪০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

এর ফলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ, এসএসসি (ভোকেশনাল) সার্টিফিকেট কোর্স ও স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে শ্রম বাজারের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টির জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, জীবিকা নির্বাহের জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে এবং স্কুল পর্যায়ে কারিগরি বিষয় ছাড়াও চারটি ট্রেড কোর্স ও স্বল্প মেয়াদী চাহিদা সম্পন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স প্রবর্তন করা হবে।

SUBSCRIBE OUR CHANNEL

প্রকল্প থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগে আট মাস বিলম্ব হওয়ায় প্রায় এক বছর পর জমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ১০০টি একাডেমিক প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ (প্রতিটি ২২৬৫ বর্গমিটার), দেড়শ একর জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, বাউন্ডারি ওয়াল ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

এ পর্যন্ত ৯৪টি উপজেলায় জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করার পর সেখানে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। ভবন কাঠামো ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এতে প্রতিটির জন্য ১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় ৩ থেকে ৪ তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে গেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সকল উপজেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

জানা গেছে, এসব ভোকেশনাল স্কুলে চাহিদা সম্পন্ন ডিপ্লোমা ও শর্ট কোর্সে নতুন কিছু বিষয় চালু করা হবে। তার মধ্যে পেপার প্রোডাকশন, রেডিক্যাল এনার্জি, ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল, টেক্সটাইল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, উড ওয়াকিং, হিটিং ভোন্টিলেটি অ্যান্ড ইয়ারকান্ডিশন, জুয়েলারিসহ প্রায় ২০টি নতুন বিষয় চালু করা হবে। এসব স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পদসৃজন করতে গত সাত মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ধার্য করা হলেও নতুন করে আরও তিন বছর নবায়ন করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সকল ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। এসব ভোকেশনাল স্কুলে সাড়ে সাত হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। গত সাত মাস আগে প্রতিটি স্কুলে ৫০ জন করে শিক্ষক পদসৃজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কারিগরি ও মাদরাসা সচিব মো. আলমগীরের পরামর্শে প্রতিটি ভোকেশনাল স্কুলে ৫০ জনের পরিবর্তে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তারা জানান, এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রকল্প থেকে গত মাসের শেষের সপ্তাহে নতুন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক পদসৃজনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখান থেকে চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দিলে তা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে কারিগরি অধিদফতর থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে যেসব উপজেলায় ভবন তৈরি কাজ শেষ হবে সেসব স্কুলে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক পিযোশ কান্তি নাথ বলেন, দেশের যেসব উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নেই অথবা সরকারি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও সরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নেই সেসব উপজেলা থেকে নির্বাচিত ১০০টি উপজেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৯০টির মতো উপজেলায় ভবন তৈরি কাজ শুরু করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ৪ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগে ১০০ উপজেলায় সাড়ে ৭ হাজার পদসৃজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হবে সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হবে। এভাবে পর্যায়ক্রেম সকল উপজেলায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক।